ছাদের আকার ও
অবস্থান : ছাদের আকার ছোট, মাঝারি বা বড় হতে পারে। এ আকার বিবেচনায় ছাদের
কোন অংশে, কি কি, কত সংখ্যক বিভিন্ন ফল, সবজি, মসলা ও ঔষধি গাছ চাষ করা
যাবে তা শুরুতেই নির্ধারণ করা প্রয়োজন। নির্ধারিত ছাদ কত তলা বিশিষ্ট,
আশপাশে কত তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং বা বড় আকারের গাছপালা আছে, সারা দিনে সেখানে
আলো-বাতাস বা রোদ পাওয়ার সুবিধা বিবেচনায় বাগান সৃষ্টি করতে হয়। ছাদের
অবস্থান অতি উঁচু হলে ঝড়-বাতাসের প্রভাব বেশি পড়ে। এজন্য বেশি লম্বা আকারের
ফল গাছ ছাদে রোপণ করা ঠিক হবে না। এমন অবস্থানে গাছ হেলে পড়া, ডাল ভেঙে
যাওয়া, ফল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য এক্ষেত্রে গাছকে ছেঁটে রেখে
বেশি ওপরের দিকে বাড়তে না দেয়া ভালো।
এছাড়া যেসব গাছ কম উচ্চতা বিশিষ্ট ও পাশের্^
বেশি বাড়ে তা দিয়ে ছাদ বাগান সাজানো প্রাধান্য দেয়া উচিত। একই কারণে কলা,
পেঁপে এ ধরনের লম্বা আকারের গাছ অতি উঁচু ছাদে রোপণ না করাই উত্তম। ছাদে
রোদের তাপ বা প্রচ-তা সরেজমিনের তুলনায় বেশি। সরাসরি রোদ পড়া এবং তার
প্রতিবিম্ব প্রতিফলনের কারণে এমনটা হয়। এ জন্য ছাদ বাগান সৃষ্টিতে ৫০-৭০%
রোদ প্রতিরোধী ঘন নেট ৭-৮ ফুট ওপরে ফিট করে ছাদের গাছের জন্য অনুকূল পরিবেশ
সৃষ্টি করা যেতে পারে।
ছাদে বাগান স্থাপন উপযোগী করা :
প্রথমে অনেকেই ছোট বড় নানা প্রকার টবে গাছ লাগিয়ে ছাদ বাগান শুরু করে। তবে
এ ব্যবস্থায় খুব একটা সফলতা আনা সম্ভব হয় না। এ জন্য ছাদে রোপিত গাছের
শিকড় যেন বেশি ছড়াতে পারে এবং বেশি সংখ্যক গাছ রোপণ করা যায় অথচ ছাদের কোনো
ক্ষতি হয় না এ ব্যবস্থা শুরুতেই নেয়া দরকার।
বক্স তৈরি করা : বেশির ভাগ
ছাদ বাগানি ছাদের কিনারগুলো ২-৩ ফুট চওড়া ও ২-৩ ফুট উঁচু করে বক্স তৈরি করে
নিয়ে সেগুলো পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করে তাতে গাছ রোপণ করে থাকে। অনেকে
নিচে ৮-১২ ইঞ্চি ফাঁক রেখে ঢালাই করে নিয়ে মজবুত করে এ বক্স বানিয়ে নেয়।
কেউবা বক্সের নিচের অংশ ২-৩ ইঞ্চি উঁচু করে এ অংশ ঢালাই করে তার ওপর সরাসরি
ইটের পাতলা গাঁথনি দিয়ে কম খরচে অনুরূপ লম্বা বক্স বানিয়ে নেয়। বিকল্প
ব্যবস্থায় টিনের/প্লাস্টিকের স্টাকচার তৈরি করে অথবা জাহাজ ভাঙা বাথটবের
আকারের পাত্র সংগ্রহ করে তা বক্স/টবের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে।
পটিং মিডিয়া দিয়ে বক্স/টব ভরাট করা : সাধারণত
নার্সারি থেকে গোবর মেশানো ভিটে মাটি সংগ্রহ করে তা গাছ রোপণের কাজে
ব্যবহার করা হয়। যেহেতু ফসলি জমির মতো ছাদ বাগানে লাগানো গাছের শিকড় ছড়ানোর
সুযোগ কম, এ জন্য ভালো মানের পটিং মিডিয়া দিয়ে এবং এ নিচের অংশে পানি
নিষ্কাশন ও সহজভাবে গাছের শিকড় ছড়ানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বক্সের
বিভিন্ন স্তর যেভাবে উপযোগী করা যেতে পারে তা নি¤œরূপ :
ক. তলার প্রথম অংশ : তৃতীয় গ্রেডের ইটের কম দামি ছোট আকারের খোয়া/টুকরা দিয়ে ৩-৪ ইঞ্চি ভরাট করা;
খ. তার ওপরের স্তরে ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে কাঠ কয়লা দিয়ে এ দ্বিতীয় স্তর ভরাট করা;
গ. ৩য় স্তর ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে নারিকেলের ছোবড়ার টুকরা অথবা নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে সাজানো;
ঘ. ৪র্থ স্তর ২-৩ ইঞ্চি পুরু মোটা বালু (সিলেট স্যান্ড) বা ক্ষুদ্র পাথর কুচি/ইটের চিপস দিয়ে ভরাট করা;
ঙ. শেষের বা ওপরের অংশ ২-২.৫ ফুট ভালো মানের পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করা হলে ছাদ বাগানের গাছের জন্য বেশি উপযোগী হবে।
পটিং মিডিয়া তৈরির পদ্ধতি : বিদেশে
প্রধানত পিটমস, পিটসয়েল ও জৈব পদার্থ (কম্পোস্ট) দিয়ে তৈরি রেডিমেড পটিং
মিডিয়া বিভিন্ন স্থানীয় নার্সারিতে পাওয়া যায়। এমন কি কোন ধরনের গাছ রোপণ
করা হবে তার জন্য ভিন্নতর মিডিয়া পাওয়া যায়। ভালো মানের মিডিয়া তৈরিতে এ
দেশে যা পাওয়া যায় তার একটা আনুপাতিক হার নিম্নে দেয়া হলো :
ক. কোকোডাস্ট বা নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া - ২৫%
খ. মোটা বালু (সিলেট স্যান্ড) - ১০%
গ. ভিটে মাটি (যা নার্সারিতে পাওয়া যায়) - ২৫%
ঘ. আর্বজনা পচা/পচা গোবর - ৩০%
ঙ. তৃতীয় গ্রেডের ইটের ক্ষুদ্র চিপস/খোয়া - ১০%
এগুলো
ভালোভাবে মিশিয়ে বক্স/টবের অবশিষ্ট অংশ ভরাট করে তাতে গাছ লাগানো হলে গাছ
দ্রুত বাড়বে, বেশি ফলন পাওয়া যাবে। মিডিয়ার সাথে কিছু পরিমাণ করাত কলের
গুঁড়া, ভার্মি কম্পোস্ট অথবা নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত কম্পোস্ট
ব্যবহার করা এবং তার সাথে কিছু হাড়ের গুঁড়া ও খৈল মেশানো ভালো।
ছাদে গাছ রোপণ : ছাদে বাগান
তৈরিতে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে উন্নত জাতের সুস্থ-সবল চারা/কলম সংগ্রহের
গুরুত্ব অপরিসীম। এ বাগানে যেসব দীর্ঘমেয়াদি ও মধ্য মেয়াদি ফল গাছ রোপণ করা
হবে তা বারোমাসী জাতের হলে ভালো হয়। অন্যথায় ৫-৬ মাস একাধারে ফল পাওয়া যায়
এমন জাতের গাছ রোপণ করা উচিত। খুব কম সময় ধরে ফল পাওয়া যায় (লিচু) এমন গাছ
ছাদের জন্য নির্বাচন করা ঠিক না। বাগানকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন তা সব
সময় কোনো না কোনো গাছে ফুল ফল ধরা অবস্থা বিরাজ করে।
ছাদ বাগানের জন্য উপযোগী ফল গাছের মধ্যে :
আম, বিদেশি কাঁঠাল (আঠা, ভোতাবিহীন রঙ্গিন জাত যা রোপণের দুই বছর পর ফল
দেয়), পেয়ারা, বারোমাসী লেবু (কাগজি, সিডলেস, এলাচি), মাল্টা, কমলা, থাই
বাতাবি, কুল (টক ও মিষ্টি), ডালিম, শরিফা, সফেদা, আমলকী, বারোমাসী আমড়া,
জামরুল, অরবরই, বিলিম্বি, করমচা, ড্রাগন অন্যতম।
শাকসবজির : বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়স, চুকুর,
ক্যাপসিকাম, শিম, বরবটি, শসা, করলা, লাউ, ধুন্দল, বারোমাসী সজিনা, লালশাক,
ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, ব্রোকলি, মুলা।
মসলা জাতীয় : মরিচ, ধনেপাতা, বিলাতি ধনিয়া, পুদিনা, কারিপাতা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গোলমরিচ, পাম।
ঔষধিগুণ বিশিষ্ট : অ্যালোভেরা, তুলসী, থানকুনি, চিরতা, স্টিভিয়া, গাইনোরা।
ফুল জাতীয় : গোলাপ, বেলী, টগর, জুঁই, গন্ধরাজ, জবা, টিকোমা, জারবেরা, শিউলি, এলামন্ডা, বগুনভিলা ও বিভিন্ন মৌসুমি ফুল।
গাছের রোপণ ও পরিচর্যা : উন্নত কাঙিক্ষত
জাতের কলম করা গাছ রোপণ করে গাছে কাঠি বা খুঁটি দিয়ে সোজা করে রাখতে হবে।
তাতে গাছ হেলে পড়া বা নড়ে গিয়ে দুর্বল হওয়া রোধ হবে। প্রয়োজনে গাছের
অপ্রয়োজনীয় কিছু ডাল বিশেষ করে ওপরের দিকে বেশি বাড়ন্ত ডাল কমিয়ে গাছকে
বেশি উঁচু না করে পাশে বাড়তে সহায়তা দিতে হবে। গাছের আকার বেশি ছোট হলে
অপেক্ষাকৃত ছোট টবে বা সিমেন্টের পরিত্যক্ত তৈরি ব্যাগে কিছু সময় সংরক্ষণ
করে পরবর্তীতে বড় হলে তা পর্যায়ক্রমে বক্স/বড় টবে রোপণ করা ভালো। টবে
সংরক্ষিত গাছ সরাসরি ছাদে না রেখে নিচে এক সারি ইটের ওপর বসানো দরকার। তাতে
টবের অতিরিক্ত পানি সহজে বের হবে, ছাদের জন্য ভালো হবে। ড্রামে সংরক্ষিত
গাছে রোদের তাপে বেশি গরম হয়। এজন্য চট/ছালা দিয়ে ড্রামের চারধার ঢেকে দিলে
তা অনেকটা রোধ হবে। গাছে পানি সেচ দেয়ার ফলে উপরিভাগের মাটি শক্ত হয়ে চট
ধরে। মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে ওপরের স্তর ভেঙে দেয়া হলে তা রোধ হবে। এ
ব্যবস্থায় আগাছা দমন করা যাবে ও ভেতরে বায়ু চলাচল সুবিধা হবে। খরা মৌসুমে
দীর্ঘমেয়াদি বড় গাছের গোড়ার চার ধারে শুকনা কচুরিপানা বা খড়কুটা, শুকনো
পাতা দিয়ে মালচিং দেয়া হলে রস সংরক্ষিত থাকবে, ঘাস গজানো রোধ হবে এবং পরে
এগুলো পচে খাদ্য হিসেবে কাজে লাগবে।
গাছের অবস্থান নির্ণয় : কোন
কোন গাছ বেশি রোদ পছন্দ করে (কাগজি লেবু, ড্রাগন ফল) কোন গাছ আধা ছায়ায়
ভালো হয় (এলাচি লেবু, জামরুল), আবার কোনো গাছ ছায়া পছন্দ করে (লটকন,
রামবুটান)। এজন্য ছাদ বাগান থেকে বেশি সুফল পেতে ছাদে রোদের/আলো-বাতাস
প্রাপ্তি অবস্থা বুঝে গাছের অবস্থান চূড়ান্ত করা প্রয়োজন।
পানি সেচ : অতিরিক্ত পানি
দেয়া এবং অতি কম দেয়া উভয়ই গাছের জন্য ক্ষতিকর। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বেশি
পানি দেয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে গাছ আক্রান্ত হয়, এমনকি মারা যায়। এ জন্য
গাছের গোড়া শুকালেই কেবল পানি দেয়া যাবে, গোড়া ভেজা থাকলে কোনো মতেই তাতে
পানি দেয়া যাবে না। কিছু গাছ বেশি পানি গ্রহণ করে (ড্রাগন, নারিকেল) অনেক
গাছে পানি কম লাগে (শিম, মরিচ, বেগুন)। বৃষ্টি বা নালায় জমে থাকা পানি গাছ
বেশি পছন্দ করে, বিশুদ্ধ পানি নহে। তবে সকাল বেলা গাছে পানি সেচ দেয়া
উত্তম।
পোকা ও মাকড় দমন : প্রাথমিক
অবস্থায় শুরুতে সীমিত সংখ্যক পোকা বা তার ডিমের গুচ্ছ দেখা যায়। নিয়মিত
ছাদ বাগান পরীক্ষা করে দেখা মাত্র পোকা বা পোকার ডিমগুলো সংগ্রহ করে মেরে
ফেলা ভালো। পাতার নিচে ভাগে পোকামাকড় অবস্থান করে। অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক
পাতায় পোকামাকড় বেশি দিন আশ্রয় নেয়। এ জন্য পাতা হলুদ হওয়া মাত্র পাতার
বোটা রেখে তা ছেঁটে দিতে হয়। অতি ঝাল ২-৩ গ্রাম মরিচের গুড়া এক লিটার
পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ছেঁকে নিয়ে তাতে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার ও
এক চা চামচ পিয়াজের রস একত্রে মিশিয়ে ৮-১০ দিনের ব্যবধানে স্প্রে করলে জৈব
পদ্ধতি অবলম্বনে গাছকে পোকার হাত থেকে নিরাপদ রাখা যায়। মাইট বা ক্ষুদ্র
মাকড় খালি চোখে দেখা যায় না। লিচু, মরিচ, বেগুন, গাঁদা ফুলে মাইটের উপদ্রব
বেশি দেখা যায়। মরিচের গুড়া পদ্ধতিতেও এ মাকড় দমন করা যায়। যেহেতু
পোকামাকড়ের অবস্থান পাতার নিচে এ জন্য এ অংশ ভালোভাবে স্প্রে করে পোকা দমনে
কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। কীটনাশক ব্যবহার কালে খেয়াল রাখতে হবে যেন তার
টকসিসিটি কম সময় থাকে (ডেকামেথ্রিন দলীয় হতে পারে তবে ইমিডাক্লোরোপ্রিড
দলীয় নয়)।
সার প্রয়োগ : মাছ, মাংস ও
তরকারি ধোয়া পানি গাছে ব্যবহার করলে গাছের খাবারের অভাব কিছুটা পূরণ হয়।
এছাড়াও মিশ্র সার, হাড়ের গুড়া মাঝে মাঝে এবং অনুখাদ্য (দস্তা, বোরন,
ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ) বছরে একবার প্রয়োগ করা ভালো। মাছের কাঁটা,
হাড়ের টুকরা, ডিমের খোসা, তরিতরকারির পরিত্যক্ত অংশ, পাতা, একটা ড্রামে
পঁচিয়ে নিয়ে ছাদ বাগানে ব্যবহার করা ভালো। কয়েক বছরের বয়স্ক গাছের গোড়ার
চারধারে সাবধানে কিছু মাটি উঠিয়ে ফেলে নতুন ভাবে পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করা
হলে গাছের স্বাস্থ্য ফেরানো সহজ হয়। সম্ভব হলে গাছকে ছাঁটাই করে কিছু
মাটিসহ উঠিয়ে নিয়ে সার মিশ্রিত মাটি পরিবর্তন করার ব্যবস্থা নেয়া যায়। এ
ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছাড়া আগানো উচিত হবে না। জেনে শুনে তা করা যেতে পারে।
অপেক্ষাকৃত ছোট টব থেকে বড় টবে গাছ অপসারণ করার মাধ্যমে গাছকে স্বাস্থ্যবান
করা যায়। যারা ছাদ বাগানে অভিজ্ঞ তাদের বাগান পরিদর্শন করে ও সফলতার
দিকগুলো জেনে বা দেখে শিখে তা নিজ বাগানে প্রয়োগ করা উত্তম। ফুল-ফল ঝরা
রোধে ও ফল ধরা বাড়াতে নানা প্রকার অনুখাদ্য/হরমোন (সিলভামিক্স, লিটোসেন,
ফ্লোরা প্রয়োগ করে অনেকে সুফল আহরণ করে থাকে।
একটা সুন্দর ছাদ বাগান দিতে পারে পরিবারের
সুস্থ পরিবেশ ও নিরাপদ চাহিদামতো প্রতিদিনের তাজা খাবার। এক তথ্য মতে যাদের
ছাদ বাগান আছে তাদের পরিবারে শান্তি, যাদের নেই তাদের তুলনায় বেশি। আসুন
আমরা যার যতটুকু সুবিধা আছে তথায় ভালোবাসার পরশে পরিচর্যায় প্রতি ছাদ
বাগানকে সুন্দর সফলভাবে গড়ে তুলি ও তা থেকে নির্মল সুফল আহরণ করি।
এম. এনামুল হক
সাবেক মহাপরিচালক, ডিএই এবং সদস্য বিশেষজ্ঞ পুল (APA), কৃষি মন্ত্রণালয়,
করনীয়:যেসব গাছ কম উচ্চতা বিশিষ্ট ও পাশের্^ বেশি বাড়ে তা দিয়ে ছাদ বাগান সাজানো প্রাধান্য দেয়া উচিত। একই কারণে কলা, পেঁপে এ ধরনের লম্বা আকারের গাছ অতি উঁচু ছাদে রোপণ না করাই উত্তম। ছাদে রোদের তাপ বা প্রচ-তা সরেজমিনের তুলনায় বেশি। সরাসরি রোদ পড়া এবং তার প্রতিবিম্ব প্রতিফলনের কারণে এমনটা হয়। এ জন্য ছাদ বাগান সৃষ্টিতে ৫০-৭০% রোদ প্রতিরোধী ঘন নেট ৭-৮ ফুট ওপরে ফিট করে ছাদের গাছের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা যেতে পারে।ছাদে বাগান স্থাপন উপযোগী করা : প্রথমে অনেকেই ছোট বড় নানা প্রকার টবে গাছ লাগিয়ে ছাদ বাগান শুরু করে। তবে এ ব্যবস্থায় খুব একটা সফলতা আনা সম্ভব হয় না। এ জন্য ছাদে রোপিত গাছের শিকড় যেন বেশি ছড়াতে পারে এবং বেশি সংখ্যক গাছ রোপণ করা যায় অথচ ছাদের কোনো ক্ষতি হয় না এ ব্যবস্থা শুরুতেই নেয়া দরকার।বক্স তৈরি করা : বেশির ভাগ ছাদ বাগানি ছাদের কিনারগুলো ২-৩ ফুট চওড়া ও ২-৩ ফুট উঁচু করে বক্স তৈরি করে নিয়ে সেগুলো পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করে তাতে গাছ রোপণ করে থাকে। অনেকে নিচে ৮-১২ ইঞ্চি ফাঁক রেখে ঢালাই করে নিয়ে মজবুত করে এ বক্স বানিয়ে নেয়। কেউবা বক্সের নিচের অংশ ২-৩ ইঞ্চি উঁচু করে এ অংশ ঢালাই করে তার ওপর সরাসরি ইটের পাতলা গাঁথনি দিয়ে কম খরচে অনুরূপ লম্বা বক্স বানিয়ে নেয়। বিকল্প ব্যবস্থায় টিনের/প্লাস্টিকের স্টাকচার তৈরি করে অথবা জাহাজ ভাঙা বাথটবের আকারের পাত্র সংগ্রহ করে তা বক্স/টবের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে।পটিং মিডিয়া দিয়ে বক্স/টব ভরাট করা : সাধারণত নার্সারি থেকে গোবর মেশানো ভিটে মাটি সংগ্রহ করে তা গাছ রোপণের কাজে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু ফসলি জমির মতো ছাদ বাগানে লাগানো গাছের শিকড় ছড়ানোর সুযোগ কম, এ জন্য ভালো মানের পটিং মিডিয়া দিয়ে এবং এ নিচের অংশে পানি নিষ্কাশন ও সহজভাবে গাছের শিকড় ছড়ানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বক্সের বিভিন্ন স্তর যেভাবে উপযোগী করা যেতে পারে তা নি¤œরূপ :ক. তলার প্রথম অংশ : তৃতীয় গ্রেডের ইটের কম দামি ছোট আকারের খোয়া/টুকরা দিয়ে ৩-৪ ইঞ্চি ভরাট করা;খ. তার ওপরের স্তরে ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে কাঠ কয়লা দিয়ে এ দ্বিতীয় স্তর ভরাট করা;গ. ৩য় স্তর ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে নারিকেলের ছোবড়ার টুকরা অথবা নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে সাজানো;ঘ. ৪র্থ স্তর ২-৩ ইঞ্চি পুরু মোটা বালু (সিলেট স্যান্ড) বা ক্ষুদ্র পাথর কুচি/ইটের চিপস দিয়ে ভরাট করা; ঙ. শেষের বা ওপরের অংশ ২-২.৫ ফুট ভালো মানের পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করা হলে ছাদ বাগানের গাছের জন্য বেশি উপযোগী হবে।
উত্তর সমূহ
ছাদের আকার ও অবস্থান : ছাদের আকার ছোট, মাঝারি বা বড় হতে পারে। এ আকার বিবেচনায় ছাদের কোন অংশে, কি কি, কত সংখ্যক বিভিন্ন ফল, সবজি, মসলা ও ঔষধি গাছ চাষ করা যাবে তা শুরুতেই নির্ধারণ করা প্রয়োজন। নির্ধারিত ছাদ কত তলা বিশিষ্ট, আশপাশে কত তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং বা বড় আকারের গাছপালা আছে, সারা দিনে সেখানে আলো-বাতাস বা রোদ পাওয়ার সুবিধা বিবেচনায় বাগান সৃষ্টি করতে হয়। ছাদের অবস্থান অতি উঁচু হলে ঝড়-বাতাসের প্রভাব বেশি পড়ে। এজন্য বেশি লম্বা আকারের ফল গাছ ছাদে রোপণ করা ঠিক হবে না। এমন অবস্থানে গাছ হেলে পড়া, ডাল ভেঙে যাওয়া, ফল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য এক্ষেত্রে গাছকে ছেঁটে রেখে বেশি ওপরের দিকে বাড়তে না দেয়া ভালো। এছাড়া যেসব গাছ কম উচ্চতা বিশিষ্ট ও পাশের্^ বেশি বাড়ে তা দিয়ে ছাদ বাগান সাজানো প্রাধান্য দেয়া উচিত। একই কারণে কলা, পেঁপে এ ধরনের লম্বা আকারের গাছ অতি উঁচু ছাদে রোপণ না করাই উত্তম। ছাদে রোদের তাপ বা প্রচ-তা সরেজমিনের তুলনায় বেশি। সরাসরি রোদ পড়া এবং তার প্রতিবিম্ব প্রতিফলনের কারণে এমনটা হয়। এ জন্য ছাদ বাগান সৃষ্টিতে ৫০-৭০% রোদ প্রতিরোধী ঘন নেট ৭-৮ ফুট ওপরে ফিট করে ছাদের গাছের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা যেতে পারে। ছাদে বাগান স্থাপন উপযোগী করা : প্রথমে অনেকেই ছোট বড় নানা প্রকার টবে গাছ লাগিয়ে ছাদ বাগান শুরু করে। তবে এ ব্যবস্থায় খুব একটা সফলতা আনা সম্ভব হয় না। এ জন্য ছাদে রোপিত গাছের শিকড় যেন বেশি ছড়াতে পারে এবং বেশি সংখ্যক গাছ রোপণ করা যায় অথচ ছাদের কোনো ক্ষতি হয় না এ ব্যবস্থা শুরুতেই নেয়া দরকার। বক্স তৈরি করা : বেশির ভাগ ছাদ বাগানি ছাদের কিনারগুলো ২-৩ ফুট চওড়া ও ২-৩ ফুট উঁচু করে বক্স তৈরি করে নিয়ে সেগুলো পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করে তাতে গাছ রোপণ করে থাকে। অনেকে নিচে ৮-১২ ইঞ্চি ফাঁক রেখে ঢালাই করে নিয়ে মজবুত করে এ বক্স বানিয়ে নেয়। কেউবা বক্সের নিচের অংশ ২-৩ ইঞ্চি উঁচু করে এ অংশ ঢালাই করে তার ওপর সরাসরি ইটের পাতলা গাঁথনি দিয়ে কম খরচে অনুরূপ লম্বা বক্স বানিয়ে নেয়। বিকল্প ব্যবস্থায় টিনের/প্লাস্টিকের স্টাকচার তৈরি করে অথবা জাহাজ ভাঙা বাথটবের আকারের পাত্র সংগ্রহ করে তা বক্স/টবের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে। পটিং মিডিয়া দিয়ে বক্স/টব ভরাট করা : সাধারণত নার্সারি থেকে গোবর মেশানো ভিটে মাটি সংগ্রহ করে তা গাছ রোপণের কাজে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু ফসলি জমির মতো ছাদ বাগানে লাগানো গাছের শিকড় ছড়ানোর সুযোগ কম, এ জন্য ভালো মানের পটিং মিডিয়া দিয়ে এবং এ নিচের অংশে পানি নিষ্কাশন ও সহজভাবে গাছের শিকড় ছড়ানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বক্সের বিভিন্ন স্তর যেভাবে উপযোগী করা যেতে পারে তা নি¤œরূপ : ক. তলার প্রথম অংশ : তৃতীয় গ্রেডের ইটের কম দামি ছোট আকারের খোয়া/টুকরা দিয়ে ৩-৪ ইঞ্চি ভরাট করা; খ. তার ওপরের স্তরে ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে কাঠ কয়লা দিয়ে এ দ্বিতীয় স্তর ভরাট করা; গ. ৩য় স্তর ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে নারিকেলের ছোবড়ার টুকরা অথবা নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে সাজানো; ঘ. ৪র্থ স্তর ২-৩ ইঞ্চি পুরু মোটা বালু (সিলেট স্যান্ড) বা ক্ষুদ্র পাথর কুচি/ইটের চিপস দিয়ে ভরাট করা; ঙ. শেষের বা ওপরের অংশ ২-২.৫ ফুট ভালো মানের পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করা হলে ছাদ বাগানের গাছের জন্য বেশি উপযোগী হবে। পটিং মিডিয়া তৈরির পদ্ধতি : বিদেশে প্রধানত পিটমস, পিটসয়েল ও জৈব পদার্থ (কম্পোস্ট) দিয়ে তৈরি রেডিমেড পটিং মিডিয়া বিভিন্ন স্থানীয় নার্সারিতে পাওয়া যায়। এমন কি কোন ধরনের গাছ রোপণ করা হবে তার জন্য ভিন্নতর মিডিয়া পাওয়া যায়। ভালো মানের মিডিয়া তৈরিতে এ দেশে যা পাওয়া যায় তার একটা আনুপাতিক হার নিম্নে দেয়া হলো : ক. কোকোডাস্ট বা নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া - ২৫% খ. মোটা বালু (সিলেট স্যান্ড) - ১০% গ. ভিটে মাটি (যা নার্সারিতে পাওয়া যায়) - ২৫% ঘ. আর্বজনা পচা/পচা গোবর - ৩০% ঙ. তৃতীয় গ্রেডের ইটের ক্ষুদ্র চিপস/খোয়া - ১০% এগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে বক্স/টবের অবশিষ্ট অংশ ভরাট করে তাতে গাছ লাগানো হলে গাছ দ্রুত বাড়বে, বেশি ফলন পাওয়া যাবে। মিডিয়ার সাথে কিছু পরিমাণ করাত কলের গুঁড়া, ভার্মি কম্পোস্ট অথবা নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত কম্পোস্ট ব্যবহার করা এবং তার সাথে কিছু হাড়ের গুঁড়া ও খৈল মেশানো ভালো। ছাদে গাছ রোপণ : ছাদে বাগান তৈরিতে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে উন্নত জাতের সুস্থ-সবল চারা/কলম সংগ্রহের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বাগানে যেসব দীর্ঘমেয়াদি ও মধ্য মেয়াদি ফল গাছ রোপণ করা হবে তা বারোমাসী জাতের হলে ভালো হয়। অন্যথায় ৫-৬ মাস একাধারে ফল পাওয়া যায় এমন জাতের গাছ রোপণ করা উচিত। খুব কম সময় ধরে ফল পাওয়া যায় (লিচু) এমন গাছ ছাদের জন্য নির্বাচন করা ঠিক না। বাগানকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন তা সব সময় কোনো না কোনো গাছে ফুল ফল ধরা অবস্থা বিরাজ করে। ছাদ বাগানের জন্য উপযোগী ফল গাছের মধ্যে : আম, বিদেশি কাঁঠাল (আঠা, ভোতাবিহীন রঙ্গিন জাত যা রোপণের দুই বছর পর ফল দেয়), পেয়ারা, বারোমাসী লেবু (কাগজি, সিডলেস, এলাচি), মাল্টা, কমলা, থাই বাতাবি, কুল (টক ও মিষ্টি), ডালিম, শরিফা, সফেদা, আমলকী, বারোমাসী আমড়া, জামরুল, অরবরই, বিলিম্বি, করমচা, ড্রাগন অন্যতম। শাকসবজির : বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়স, চুকুর, ক্যাপসিকাম, শিম, বরবটি, শসা, করলা, লাউ, ধুন্দল, বারোমাসী সজিনা, লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, ব্রোকলি, মুলা। মসলা জাতীয় : মরিচ, ধনেপাতা, বিলাতি ধনিয়া, পুদিনা, কারিপাতা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গোলমরিচ, পাম। ঔষধিগুণ বিশিষ্ট : অ্যালোভেরা, তুলসী, থানকুনি, চিরতা, স্টিভিয়া, গাইনোরা। ফুল জাতীয় : গোলাপ, বেলী, টগর, জুঁই, গন্ধরাজ, জবা, টিকোমা, জারবেরা, শিউলি, এলামন্ডা, বগুনভিলা ও বিভিন্ন মৌসুমি ফুল। গাছের রোপণ ও পরিচর্যা : উন্নত কাঙিক্ষত জাতের কলম করা গাছ রোপণ করে গাছে কাঠি বা খুঁটি দিয়ে সোজা করে রাখতে হবে। তাতে গাছ হেলে পড়া বা নড়ে গিয়ে দুর্বল হওয়া রোধ হবে। প্রয়োজনে গাছের অপ্রয়োজনীয় কিছু ডাল বিশেষ করে ওপরের দিকে বেশি বাড়ন্ত ডাল কমিয়ে গাছকে বেশি উঁচু না করে পাশে বাড়তে সহায়তা দিতে হবে। গাছের আকার বেশি ছোট হলে অপেক্ষাকৃত ছোট টবে বা সিমেন্টের পরিত্যক্ত তৈরি ব্যাগে কিছু সময় সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে বড় হলে তা পর্যায়ক্রমে বক্স/বড় টবে রোপণ করা ভালো। টবে সংরক্ষিত গাছ সরাসরি ছাদে না রেখে নিচে এক সারি ইটের ওপর বসানো দরকার। তাতে টবের অতিরিক্ত পানি সহজে বের হবে, ছাদের জন্য ভালো হবে। ড্রামে সংরক্ষিত গাছে রোদের তাপে বেশি গরম হয়। এজন্য চট/ছালা দিয়ে ড্রামের চারধার ঢেকে দিলে তা অনেকটা রোধ হবে। গাছে পানি সেচ দেয়ার ফলে উপরিভাগের মাটি শক্ত হয়ে চট ধরে। মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে ওপরের স্তর ভেঙে দেয়া হলে তা রোধ হবে। এ ব্যবস্থায় আগাছা দমন করা যাবে ও ভেতরে বায়ু চলাচল সুবিধা হবে। খরা মৌসুমে দীর্ঘমেয়াদি বড় গাছের গোড়ার চার ধারে শুকনা কচুরিপানা বা খড়কুটা, শুকনো পাতা দিয়ে মালচিং দেয়া হলে রস সংরক্ষিত থাকবে, ঘাস গজানো রোধ হবে এবং পরে এগুলো পচে খাদ্য হিসেবে কাজে লাগবে। গাছের অবস্থান নির্ণয় : কোন কোন গাছ বেশি রোদ পছন্দ করে (কাগজি লেবু, ড্রাগন ফল) কোন গাছ আধা ছায়ায় ভালো হয় (এলাচি লেবু, জামরুল), আবার কোনো গাছ ছায়া পছন্দ করে (লটকন, রামবুটান)। এজন্য ছাদ বাগান থেকে বেশি সুফল পেতে ছাদে রোদের/আলো-বাতাস প্রাপ্তি অবস্থা বুঝে গাছের অবস্থান চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। পানি সেচ : অতিরিক্ত পানি দেয়া এবং অতি কম দেয়া উভয়ই গাছের জন্য ক্ষতিকর। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বেশি পানি দেয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে গাছ আক্রান্ত হয়, এমনকি মারা যায়। এ জন্য গাছের গোড়া শুকালেই কেবল পানি দেয়া যাবে, গোড়া ভেজা থাকলে কোনো মতেই তাতে পানি দেয়া যাবে না। কিছু গাছ বেশি পানি গ্রহণ করে (ড্রাগন, নারিকেল) অনেক গাছে পানি কম লাগে (শিম, মরিচ, বেগুন)। বৃষ্টি বা নালায় জমে থাকা পানি গাছ বেশি পছন্দ করে, বিশুদ্ধ পানি নহে। তবে সকাল বেলা গাছে পানি সেচ দেয়া উত্তম। পোকা ও মাকড় দমন : প্রাথমিক অবস্থায় শুরুতে সীমিত সংখ্যক পোকা বা তার ডিমের গুচ্ছ দেখা যায়। নিয়মিত ছাদ বাগান পরীক্ষা করে দেখা মাত্র পোকা বা পোকার ডিমগুলো সংগ্রহ করে মেরে ফেলা ভালো। পাতার নিচে ভাগে পোকামাকড় অবস্থান করে। অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক পাতায় পোকামাকড় বেশি দিন আশ্রয় নেয়। এ জন্য পাতা হলুদ হওয়া মাত্র পাতার বোটা রেখে তা ছেঁটে দিতে হয়। অতি ঝাল ২-৩ গ্রাম মরিচের গুড়া এক লিটার পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ছেঁকে নিয়ে তাতে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার ও এক চা চামচ পিয়াজের রস একত্রে মিশিয়ে ৮-১০ দিনের ব্যবধানে স্প্রে করলে জৈব পদ্ধতি অবলম্বনে গাছকে পোকার হাত থেকে নিরাপদ রাখা যায়। মাইট বা ক্ষুদ্র মাকড় খালি চোখে দেখা যায় না। লিচু, মরিচ, বেগুন, গাঁদা ফুলে মাইটের উপদ্রব বেশি দেখা যায়। মরিচের গুড়া পদ্ধতিতেও এ মাকড় দমন করা যায়। যেহেতু পোকামাকড়ের অবস্থান পাতার নিচে এ জন্য এ অংশ ভালোভাবে স্প্রে করে পোকা দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। কীটনাশক ব্যবহার কালে খেয়াল রাখতে হবে যেন তার টকসিসিটি কম সময় থাকে (ডেকামেথ্রিন দলীয় হতে পারে তবে ইমিডাক্লোরোপ্রিড দলীয় নয়)। সার প্রয়োগ : মাছ, মাংস ও তরকারি ধোয়া পানি গাছে ব্যবহার করলে গাছের খাবারের অভাব কিছুটা পূরণ হয়। এছাড়াও মিশ্র সার, হাড়ের গুড়া মাঝে মাঝে এবং অনুখাদ্য (দস্তা, বোরন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ) বছরে একবার প্রয়োগ করা ভালো। মাছের কাঁটা, হাড়ের টুকরা, ডিমের খোসা, তরিতরকারির পরিত্যক্ত অংশ, পাতা, একটা ড্রামে পঁচিয়ে নিয়ে ছাদ বাগানে ব্যবহার করা ভালো। কয়েক বছরের বয়স্ক গাছের গোড়ার চারধারে সাবধানে কিছু মাটি উঠিয়ে ফেলে নতুন ভাবে পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করা হলে গাছের স্বাস্থ্য ফেরানো সহজ হয়। সম্ভব হলে গাছকে ছাঁটাই করে কিছু মাটিসহ উঠিয়ে নিয়ে সার মিশ্রিত মাটি পরিবর্তন করার ব্যবস্থা নেয়া যায়। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছাড়া আগানো উচিত হবে না। জেনে শুনে তা করা যেতে পারে। অপেক্ষাকৃত ছোট টব থেকে বড় টবে গাছ অপসারণ করার মাধ্যমে গাছকে স্বাস্থ্যবান করা যায়। যারা ছাদ বাগানে অভিজ্ঞ তাদের বাগান পরিদর্শন করে ও সফলতার দিকগুলো জেনে বা দেখে শিখে তা নিজ বাগানে প্রয়োগ করা উত্তম। ফুল-ফল ঝরা রোধে ও ফল ধরা বাড়াতে নানা প্রকার অনুখাদ্য/হরমোন (সিলভামিক্স, লিটোসেন, ফ্লোরা প্রয়োগ করে অনেকে সুফল আহরণ করে থাকে। একটা সুন্দর ছাদ বাগান দিতে পারে পরিবারের সুস্থ পরিবেশ ও নিরাপদ চাহিদামতো প্রতিদিনের তাজা খাবার। এক তথ্য মতে যাদের ছাদ বাগান আছে তাদের পরিবারে শান্তি, যাদের নেই তাদের তুলনায় বেশি। আসুন আমরা যার যতটুকু সুবিধা আছে তথায় ভালোবাসার পরশে পরিচর্যায় প্রতি ছাদ বাগানকে সুন্দর সফলভাবে গড়ে তুলি ও তা থেকে নির্মল সুফল আহরণ করি। এম. এনামুল হক সাবেক মহাপরিচালক, ডিএই এবং সদস্য বিশেষজ্ঞ পুল (APA), কৃষি মন্ত্রণালয়,
করনীয়:যেসব গাছ কম উচ্চতা বিশিষ্ট ও পাশের্^ বেশি বাড়ে তা দিয়ে ছাদ বাগান সাজানো প্রাধান্য দেয়া উচিত। একই কারণে কলা, পেঁপে এ ধরনের লম্বা আকারের গাছ অতি উঁচু ছাদে রোপণ না করাই উত্তম। ছাদে রোদের তাপ বা প্রচ-তা সরেজমিনের তুলনায় বেশি। সরাসরি রোদ পড়া এবং তার প্রতিবিম্ব প্রতিফলনের কারণে এমনটা হয়। এ জন্য ছাদ বাগান সৃষ্টিতে ৫০-৭০% রোদ প্রতিরোধী ঘন নেট ৭-৮ ফুট ওপরে ফিট করে ছাদের গাছের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা যেতে পারে।ছাদে বাগান স্থাপন উপযোগী করা : প্রথমে অনেকেই ছোট বড় নানা প্রকার টবে গাছ লাগিয়ে ছাদ বাগান শুরু করে। তবে এ ব্যবস্থায় খুব একটা সফলতা আনা সম্ভব হয় না। এ জন্য ছাদে রোপিত গাছের শিকড় যেন বেশি ছড়াতে পারে এবং বেশি সংখ্যক গাছ রোপণ করা যায় অথচ ছাদের কোনো ক্ষতি হয় না এ ব্যবস্থা শুরুতেই নেয়া দরকার।বক্স তৈরি করা : বেশির ভাগ ছাদ বাগানি ছাদের কিনারগুলো ২-৩ ফুট চওড়া ও ২-৩ ফুট উঁচু করে বক্স তৈরি করে নিয়ে সেগুলো পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করে তাতে গাছ রোপণ করে থাকে। অনেকে নিচে ৮-১২ ইঞ্চি ফাঁক রেখে ঢালাই করে নিয়ে মজবুত করে এ বক্স বানিয়ে নেয়। কেউবা বক্সের নিচের অংশ ২-৩ ইঞ্চি উঁচু করে এ অংশ ঢালাই করে তার ওপর সরাসরি ইটের পাতলা গাঁথনি দিয়ে কম খরচে অনুরূপ লম্বা বক্স বানিয়ে নেয়। বিকল্প ব্যবস্থায় টিনের/প্লাস্টিকের স্টাকচার তৈরি করে অথবা জাহাজ ভাঙা বাথটবের আকারের পাত্র সংগ্রহ করে তা বক্স/টবের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে।পটিং মিডিয়া দিয়ে বক্স/টব ভরাট করা : সাধারণত নার্সারি থেকে গোবর মেশানো ভিটে মাটি সংগ্রহ করে তা গাছ রোপণের কাজে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু ফসলি জমির মতো ছাদ বাগানে লাগানো গাছের শিকড় ছড়ানোর সুযোগ কম, এ জন্য ভালো মানের পটিং মিডিয়া দিয়ে এবং এ নিচের অংশে পানি নিষ্কাশন ও সহজভাবে গাছের শিকড় ছড়ানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বক্সের বিভিন্ন স্তর যেভাবে উপযোগী করা যেতে পারে তা নি¤œরূপ :ক. তলার প্রথম অংশ : তৃতীয় গ্রেডের ইটের কম দামি ছোট আকারের খোয়া/টুকরা দিয়ে ৩-৪ ইঞ্চি ভরাট করা;খ. তার ওপরের স্তরে ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে কাঠ কয়লা দিয়ে এ দ্বিতীয় স্তর ভরাট করা;গ. ৩য় স্তর ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে নারিকেলের ছোবড়ার টুকরা অথবা নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে সাজানো;ঘ. ৪র্থ স্তর ২-৩ ইঞ্চি পুরু মোটা বালু (সিলেট স্যান্ড) বা ক্ষুদ্র পাথর কুচি/ইটের চিপস দিয়ে ভরাট করা; ঙ. শেষের বা ওপরের অংশ ২-২.৫ ফুট ভালো মানের পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করা হলে ছাদ বাগানের গাছের জন্য বেশি উপযোগী হবে।